আজ রবিবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয় মামলা করেছি চারজনের বিরুদ্ধে-পলাশ

কাউছার আহমেদ পলাশ

 


নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম উন্নয়ন ও কল্যান বিষয়ক সম্পাদক কাউছার আহমেদ পলাশ বলেছেন, আমি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নই। আমি অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে। যারা বলছেন আমি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করি নাই। আমি তানভীরের বিরুদ্ধে মামলা করছি। বাদল ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করছি। আল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করছি। জাবেদের বিরুদ্ধে মামলা করছি। নাম ধরে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করছি। আমি সাংবাদিক বিরুদ্ধে মামলা করি নাই। তারা আদালতে প্রমান করুক তারা যা লিখছে তা সত্য।
বুধবার (১১ এপ্রিল) চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ ট্রাক কভার্ডাভ্যান লং ভেহিক্যাল ও নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

শ্রমিক সমাবেশ

কাউছার আহমেদ পলাশ বক্তব্যের শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার বন্ধু জাকিরুল আলম হেলাল ভাই এর মায়ের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ ও কষ্ট পেয়েছি। প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি শোক প্রস্তাব করেন। এবং উপস্থিত শ্রমিকগণ হাত তুলে শোক প্রস্তাব সর্মথন করেন। উপস্থিত শ্রমিকদের তিনি জানাজায় অংশগ্রহণ করার আহবান জানান।

কাউছার আহমেদ পলাশ বলেন, সাংবাদিকদের কাউকে আমি কিছু বলি না। আমি তানভীরকে বলি। কোন তথ্য ছাড়া তানভীর লিখেছে, আলামিন লিখেছে, বাদল ভাই লিখেছে, লিখেছে জাভেদ জুয়েল। আমি তো নাম বলে দিলাম। আমি তো গণহারে সাংবাদিকদের বলি নাই। আমি গণহারে মামলা করি নাই। আমি নাম মেনশন করে মামলা করেছি। যারা মিথ্যাচার, অপপ্রচার করেছে তাদের নাম দিয়ে মামলা করেছি। আদালতে জজ সাহেবের সামনে প্রমান করতে হবে।
এসময় পলাশ বলেন, আমার সাংবাদিক বন্ধুরা আমরা যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম করি তার সংবাদ লিখে মানুষের কাছে পৌঁছায়। শ্রমিকদের সকল আন্দোলন সংগ্রামের খবর সাংবাদিকরা বাংলার মানুষের কাছে তুলে ধরে। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে সেগুলোর খবর সাংবাদিক বন্ধুরা বাংলার প্রতিটি মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌছে দিয়েছেন। ঐসকল ভালো সাংবাদিকের মাঝে কিছু চিটার বাটপার আছে যারা মঙ্গল গ্রহে, চাঁদের দেশে গিয়ে কাব্য লিখে। তাদের কাব্যে একটি ভিলেন, একটি নায়কের দরকার পরে। তাতে একজনের নাম বসায়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি কথা বলতে হয়। আমি দমে যাবার পাত্র নই। আমি অনেক সংগ্রাম করতে করতে এখানে এসেছি। অনেক ঘাত প্রতিঘাত লড়াই করে এখানে এসেছি। ছাত্ররাজনীতি করা অবস্থায় দেখেছি কিভাবে শাসন-শোষন হচ্ছে। সেই সময় থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করে আজ পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। আর এই কাজের মাধ্যমে যদি কেউ উপকৃত হয় সেজন্যই কাজ করে গেছি। আর রাজপথে কাজ করতে করতে কেউ যদি আমার প্রতি হিংসাত্মক হযয়ে যান, আমার অপশক্তি হয়ে আমাকে হিংসা করে যদি কিছু করতে চান। তাহলে জেনে রাখবেন, আমাকে থামায়া রাখতে পারবেন না।
কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক প্রচার করছে আমরা নাকি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। প্রশ্নই ওঠে না, কাউসার আহমেদ পলাশ আর শ্রমিক সেক্টর কখনো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হতে পারে না। সাংবাদিক আমাদের বন্ধু। কিন্তু দুঃখ লাগে তখন, যখন ভালো সাংবাদিকদের মধ্য থেকে কিছু চিটার-বাটপার অপসাংবাদিক বের হয়ে আসে। যারা তথ্য ছাড়া লিখছে। যারা একজনের বিরুদ্ধে লিখছে কিন্তু যার বিরুদ্ধে লিখছে তাকে প্রশ্ন করছে না। প্রশ্ন না করে একের পর এক বানোয়াট গল্প ফেঁদে যাচ্ছে। এতে আপনি কলঙ্কিত করছেন সেই সকল সাংবাদিকদের যাদের আমরা লাল সেলাম জানাই। যে সকল সাংবাদিকরা তাদের নিয়মতান্ত্রিক লেখনীর জন্য এদেশের সকল আন্দোলন সফল হয়েছে। এই সাংবাদিকদের প্রচারের মাধ্যমেই সেদিন স্বৈরতন্ত্র থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু সেই সাংবাদিকদের কলঙ্কিত করছেন আপনি। আপনি কারো বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছেন তাকে প্রশ্ন না করেই। আপনি তার বিরুদ্ধে মনগড়া কথা লিখে দিয়ে অপরাজনীতি করছেন।
তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খ-ন করে বলেন, আপনি লিখেছেন আমি প্রাডো গাড়ি দিয়ে চলি। হ্যা চলি। কিন্তু আপনি গাড়ির নাম্বারটা ভুল লিখেছেন। আমার গাড়ির নাম্বার ৬৩০০। জেনে রাখবেন, অহংকার নয়, গর্ব নয়, আমাদের বাপ দাদাদের আমল থেকেই আমরা এভাবেই চলি। ১৯৭৩ সালে আমার বাবার মরিস মডেলের ব্রান্ডের গাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ টু ঢাকা চলাচল করেছি। আমরা যখন মরিস গাড়িতে চড়েছি তখন নারায়ণগঞ্জের অনেক কুতুবরা মুড়ির টিনে চলাচল করতেন। সে অনুযায়ী আমার আরো দামি গাড়িতে চলা উচিত। ইনকাম ট্যাক্সের মধ্যে আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসাব দেয়া আছে। আমার বাবার ৭০-৮০ বিঘা জমির ভাগ-বাটোয়ারা এখনো করি নাই। এর বাইরেও আরো আছে। আবার আমি তো ব্যবসা করি তারও হিসেব জমা দেয়া আছে। যান সাংবাদিক বন্ধুরা যে চারজনের নাম বললাম গিয়ে দেখে আসেন। এবং আরো দু-তিনজন আছে যারা তাদের সাথে গোলটেবিলে বসে অনেক কিছুই করেন। এখনো লেখেন নি কিন্তু লিখবেন। লিখেন আর আমি মামলা করবো। আপনাদেরকে জনগণের সামনে তুলে ধরবো। আমি দমে যাবার পাত্র নই।
পাইওনিয়র গার্মেন্টস বন্ধ সম্পর্কে বলেন, আপনারা লিখলেন আমার ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না। আমার জন্য পাওনিয়র গার্মেন্টস আমার কারনে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসন, কারখানা পরিদর্শক, সরকারের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞেস করেন। বিকেএমই এর প্রেসিডেন্ট সেলিম ওসমান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের সামনে বৈঠক হয়েছিল পাওনিয়র গার্মেন্টস এর মালিক বাদশাহ মিয়ার সাথে। বাদশাহ মিয়াকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন আপনি ফ্যাক্টরি বন্ধ করবেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমার ফ্যাক্টরির মধ্যে ঠিকমতো গ্যাস পাই না। প্রতিদিন তেল দিয়ে বয়লার চালাতে হয়, লক্ষ লক্ষ টাকা লস গুনতে হয়। আমি ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিবো। আমি তাকে বললাম, শ্রমিককে ন্যায্য পাওনা দিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হবে। তখন ষড়যন্ত্র শুরু হলো। ঐ সময় আমি এসপি সাহেব নুরুল ইসলামকে ম্যাসেজ করে জানিয়েছিলাম, নকল কিউসি বানিয়ে শ্রমিকদের শাসানো হচ্ছে, তাদের ন্যায্য দেয়া হচ্ছে না। ঐ সময় শ্রমিকদের নির্যাতন করছিল, তখন শ্রমিকরা রুখে দাড়িয়েছিল। তারপরে শ্রমিকদের ন্যায্য না দিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে ভালুকাতে চলে গিয়েছিলেন পাইওনিয়রের মালিক বাদশা মিয়া।
তিনি হামিদ ফ্যাশন বন্ধ সম্পর্কে বলেন, হামিদ ফ্যাশন আপনি বলেছেন বন্ধ। কিন্তু হামিদ ফ্যাশন এখনো চলছে। আমি গুলশান বনানীতে থাকি বলেছেন। হ্যা, বসুন্ধরা, গুলশান, বনানীতে থাকার ক্ষমতা পৈত্রিক সূত্রেই আমার আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ ক্ষমতা আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু আমি থাকতে পারলেও আমি থাকি না। কেবল এই শ্রমিক, মজদুরদের জন্য। এদের ন্যায্য আদায়ের জন্য আমি ঢাকা, গুলশান, বনানীতে গিয়ে থাকি না। সেখানে থাকলে আমার শ্রমিক বন্ধুগণ কার কাছে গিয়ে তাদের কষ্ট জানাবে? আপনারা লিখেছেন মিথ্যা লিখেছেন।
কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, লিখেছেন আমার বিরুদ্ধে ২১টা মামলা। কিন্তু না, ২৪ টা মামলা মাথায় নিয়ে আমাকে ঘুরতে হয়েছে। বিএনপির আমলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, সে আমলে ট্রায়াল হয়েছে। কিন্তু তখন মামলার বাদি আদালতে দাড়িয়ে বলেছিলো, এই লোক আমার ছেলের ঘটনার সময় ছিল না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান হয় নি। তখন মামলাগুলো তদন্ত করে একটা মামলারও সত্যতা পায় নি প্রশাসন। আমি যদি গডফাদার হতাম তাহলে আমাকে যখন ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন তো মানুষের খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা আমাকে মুক্ত করার জন্য ফতুল্লা থানার সামনে বৃষ্টিতে ভিজে, রোজা রেখে অবস্থান করেছিল। এতেই প্রমান হয় মানুষ আমাকে ভয় পায় না, আমাকে ভালোবাসে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ফেডারেশন গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন সেন্টু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম, জেলার সাধারন সম্পাদক কবির হোসেন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, সদর উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, ট্রাক কাভার্ডভ্যান লং ভিহেক্যাল জেলার সভাপতি মনির তালুকদার, আন্ত:জেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের পাগলা শাখার সভাপতি বাবুল আহমেদ, তাজুল ইসলাম ও প্রমুখ।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ